শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা যা খাবেন না
বিশেষজ্ঞদের মতে একটি শিশুকে জন্মের পর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র তার মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। তাই এই সময় মায়ের স্বাস্থ্য কে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা যা খাবেন না সেই সম্পর্কে সকলের সঠিক তথ্য জানা উচিত। তাই আজকের এই পোস্টে আলোচনা করব শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা যা খাবেন না- সেই বিষয়টি নিয়ে।
পেজ সূচিপএঃ শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা যা খাবেন না
সামুদ্রিক মাছ
এমনিতে সামুদ্রিক মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের সামুদ্রিক মাছ না খাওয়াই ভালো। কারণ সামুদ্রিক মাছে পারদের পরিমাণ বেশি থাকে। সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার ফলে মায়ের বুকের দুধেও পারদের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর এই দুধ শিশুকে পান করালে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে।
টক জাতীয় ফল
টক জাতীয় ফল খাওয়া সাধারণত একজন নতুন মায়ের জন্য ভালো। টক জাতীয় ফলে ‘ভিটামিন-সি’ থাকে যা অনেক শিশু সহ্য করতে পারেনা। এতে করে অনেক শিশুর ডায়রিয়ার মতো রোগ দেখা দিতে পারে। আবার অনেক শিশুর ‘ভিটামিন-সি’ তে এলার্জি থাকে। তাই এসব দিক বিবেচনায় শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় টক জাতীয় ফল না খাওয়াই ভালো।
চা অথবা কফি
একজন নতুন মা অল্প পরিমাণে চা কফি পান করতে পারবেন। কিন্তু দিনে ২-৩ বারের বেশি চা কফি পান করা নতুন মায়ের জন্য উচিত না। কারণ অতিরিক্ত চা কফি পান করার ফলে মায়ের দুধ থেকে শিশুর শরীরে ক্যাফিন ছড়িয়ে যেতে পারে।
অ্যালকোহল
স্বাভাবিকভাবেই একজন মানুষের মদ্যপান থেকে দূরে থাকা উচিত। আর এটি যদি একজন স্তন্যদায়ী মায়ের ক্ষেত্রে হয় তাহলে তো সেটি থেকে আরো দূরে থাকা উচিত। কারণ মনে রাখা উচিত একজন স্তন্যদায়ী মা যা খান তার সবগুলো পুষ্টি গুনাগুন একজন শিশু তার মায়ের দুধ থেকে নিয়ে থাকে। তাই একজন স্তন্যদায়ী মা যদি মদ্যপান করে তাহলে সেটি তার দুধের মাধ্যমে তার শিশুর শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
রসুন
রসুনকে আমরা খাবারে মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। রসুন একটি কড়া গন্ধযুক্ত মসলা। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় একজন স্তন্যদায়ী মায়ের উচিত অতিরিক্ত পরিমাণে রসুন না খাওয়া। কারণ অতিরিক্ত রসুন খেলে রসুনের কড়া গন্ধ বুকের দুধেও পাওয়া যেতে পারে। এই গন্ধের জন্য শিশু তার মায়ের বুকের দুধ নাও খেতে চাইতে পারে।
পিপারমেন্ট
স্বাভাবিকভাবে ধারণা করা হয় যে পিপারমেন্ট মায়ের স্তনে দুধের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তবে এটি এখনো প্রমাণিত হয়নি। অতিরিক্ত পরিমাণে পিপারমেন্ট গ্রহণ করলে মায়ের হৃদ স্পন্দন বেড়ে যাওয়া, এলার্জি কিংবা মাথা ব্যথার মত সমস্যা হতে পারে। যা শিশুর শরীরেও প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা থাকে।
আরো পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা
পিপারমেন্ট এক ধরনের হার্বস। এই ধরনের হার্বসে অ্যান্টিজ্যালাকটাগস নামের এক ধরনের উপাদান থাকে, যা মায়ের বুকের দুধের পরিমাণ কমিয়েও দিতে পারে।
চকলেট
চকলেট খেতে আমরা সবাই কমবেশি পছন্দ করি। স্বাভাবিকভাবে একজন স্তন্যদায়ী মা ও চকলেট খেতে পছন্দ করে থাকে। তবে চকলেটে থিওব্রোমিন নামে এক ধরনের পদার্থের উপস্থিতি আছে, যা অনেকটাই ক্যাফিনের মত।
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় একজন স্তন্যদায়ী মা যদি দিনে ৭৫০ মিলিগ্রাম এর থেকে বেশি চকলেট বা থিওব্রোমিন গ্রহণ করে থাকে, তাহলে সেই শিশুকে দুধ পান করালে শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে কিংবা বিভিন্ন অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরার উপকারিতা ও অপকারিতা
চীনা বাদাম
স্তন্যদায়ী মায়ের অথবা তার পরিবারের অন্য কোন সদস্যের যদি চীনা বাদামে এলার্জি থাকে, তাহলে চীনা বাদাম খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ চীনা বাদামে এমন কিছু প্রোটিন থাকে যা অ্যালার্জির কারণ। মা যখন তার শিশুকে দুধ পান করান তখন এই প্রোটিন শিশুর শরীরে প্রবেশ করে। এই কারণে অনেক সময় শিশুর শরীরে লাল লাল দাগ দেখা যায়।
শেষ কথা
যেহেতু মায়ের স্বাস্থ্যের সাথে শিশুর স্বাস্থ্যেরও পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে। তাই একজন মায়ের অবশ্যই উপরে উল্লেখিত খাদ্যগুলো বিবেচনা করে খাওয়া উচিত। কারণ প্রতিটি মা-ই তার সন্তানকে সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে দেখতে চাই। কিন্তু অনেক সময় অনেক বিষয় না জানার কারণে শিশুর জীবন হুমকির মুখে পড়ে যায়।
“আপনি যদি একজন মা হয়ে থাকেন এবং আপনার শিশুর সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন চান, তাহলে আগে নিজের স্বাস্থ্য ভালো রাখার চেষ্টা করুন”
এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ!!!!! এরকম আরো নতুন নতুন পোস্ট পড়ার জন্য নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন!