ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন ও চিকিৎসা
বর্তমানে আমাদের দেশে ডেঙ্গু জ্বর একটি আতঙ্কের নাম। ডেঙ্গু জ্বরটি ভাইরাস-জনিত হওয়ায় এর ভয়াবহতা অনেক বেশি। সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে। তাই আমাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানাটা খুবই জরুরী। ডেঙ্গু জ্বরের কারণে আমাদের দেশে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।
ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ- জ্বর। ডেঙ্গু জ্বর হলে ৯৯-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে। তাই ডেঙ্গুর বিষয়ে আমাদের অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করে চলা উচিত। আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে।
পেজ সূচিপত্রঃ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন ও চিকিৎসা
ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর কি?
ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর একটি সাধারণ ভেক্টর-বাহিত ভাইরাসঘটিত রোগ যা সাধারণত এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। গ্রীষ্ম -প্রধান দেশে, ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে। আমাদের দেশে বর্ষাকালে সাধারণত ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি থাকে।
বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটে। এছাড়া এটি সময় এবং অঞ্চল ভেদে কোথাও কোথাও মহামারীর মতো আকার ধারণ করে। বিনা চিকিৎসা, দেরিতে চিকিৎসা কিংবা ভুল চিকিৎসার কারণে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। তাই আমাদেরকে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে ভালোভাবেই জানতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন
ডেঙ্গু এক ধরনের ভাইরাস জনিত রোগ যা সাধারণত মশার মাধ্যমে ছড়াই। ডেঙ্গু একটি ভয়াবহ রোগ তার কারণ হচ্ছে প্রথমবার ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে কোন লক্ষণই দেখা যায় না। শুধু কিছু কিছু ক্ষেত্রেই এই রোগের প্রভাব গভীর হয়ে থাকে। নিচে এর কিছু লক্ষণ আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো-
✅ বমি বমি ভাব
✅ মাংসপেশি অথবা অস্থির সংযোগস্থল ব্যথা
✅ মাথা ঘোরা
✅ উচ্চ জ্বর(৯৯-১০৬) ডিগ্রি ফারেনহাইট
✅ প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা
✅ গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
✅ চোখের পেছনে ব্যাথার অনুভূতি হওয়া
✅ ত্বকের বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি হওয়া
উপরে উল্লেখিত উপসর্গগুলি সাধারণত ডেঙ্গু আক্রান্তের ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে প্রকাশ পায়। উপসর্গগুলো ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে এর ভয়াবহতা আরো বেশি বৃদ্ধি পায়। তাই যারা প্রথমবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন তারা সতর্কতার সাথে থাকবেন।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
ডেঙ্গু একটি বিপদজনক রোগ। এখন পর্যন্ত এই রোগের কোন ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। তবে বেশিরভাগ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঘরোয়া চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমেই সুস্থ করে তোলা সম্ভব। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোন স্যাঁতসেঁতে ঘরে রাখা যাবে না। দিনের বেলা এবং রাতের বেলা সব সময় মশারি টাঙ্গিয়ে শুয়ে থাকতে হবে। মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য ফুল প্যান্ট এবং ফুলহাতা শার্ট পড়তে হবে।
আরো পড়ুনঃ কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
তবে রোগীর অবস্থা খারাপ বলে তাকে হসপিটালে ভর্তি করতে হবে এবং ডাক্তারের নজর দারিতে রাখতে হবে। চিকিৎসকরা ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির শিরায় ইলেক্ট্রোলাইট পুশ করে থাকে। এটি আক্রান্ত রোগীর শরীরে লবণ এবং পানির যোগান দিয়ে থাকে।
ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া প্রতিকার
ডেঙ্গু যেহেতু একটি মশাবাহিত রোগ, তাই নিজেকে এবং পরিবারকে মশার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে-
✔ বাড়ির আশেপাশে কখনো পানি জমতে দেওয়া যাবে না। কারণ জমে থাকা পানি মশার বংশবিস্তারের জন্য আদর্শ জায়গা। তাই আমাদের আশেপাশে থাকা গাছের টব, ডাবের খোসা, ভাঙ্গা বালতি, পড়ে থাকা গাড়ির নষ্ট টায়ার ইত্যাদিতে কখনোই পানি জমতে দেওয়া যাবেনা।
✔ রাতে শোয়ার সময় অবশ্যই মশারি টাঙ্গাতে হবে
✔ পুরো শরীর ঢেকে রাখার জন্য ফুল হাতা শার্ট এবং ফুল প্যান্ট পরতে হবে
✔ মশা নিরোধক কেমিক্যাল যেমন পারমেথ্রিন ব্যবহার করতে হবে
✔ ডেঙ্গুবাহিত মশা সাধারণত ভোরে এবং সন্ধ্যার দিকে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে তাই এই সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের জন্য অনুচিত খাবার
একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির যে খাবার গুলো খাওয়া অনুচিত সেই খাবারগুলো নিচে দেওয়া হল-
❎ অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার
❎ ভাজাপোড়া খাবার
❎ চর্বিযুক্ত খাবার
❎ আমিষ জাতীয় খাবার
শেষ কথা
ডেঙ্গু জ্বর একটি সাধারন রোগ। তবে অবহেলা করলে এই রোগ মারাত্মক ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। তাই আমাদের ডেঙ্গু জ্বর হলে উপরে দেওয়া সতর্ক গুলো অবলম্বন করতে হবে এবং ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। ডেঙ্গু যেহেতু মশাবাহিত একটি রোগ। তাই আমাদেরকে মশানিধন করতে হবে।
“ডেঙ্গু হলে ভয় নয়, সতর্ক থাকুন-সাবধানতা অবলম্বন করুন, এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন”, তাহলেই ইনশাআল্লাহ ভালো হয়ে যাবেন।
এই গুরুত্বপূর্ণ পোস্টটি এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ😍😍😍😍!!