কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
শরীরে ক্যালরির চাহিদা পূরণ করার জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য খাদ্য হচ্ছে কলা। কলা আশেপাশের দোকানে বা হাতের নাগালে খুব সহজেই পাওয়া যায়। কলাতে ভিটামিন, আয়রন এবং খনিজ পদার্থ ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আমাদের মধ্যে অনেকেই কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানিনা। তাই আজকের এই পোস্টে কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব-
সকালে ব্রেকফাস্ট করার সময় অনেকে কলা খেতে পছন্দ করেন। একটি মাঝারি মাপের কলা পুষ্টি গুণাগুন দ্বারা ভরপুর থাকে। কলা থেকে ১১০ ক্যালরি পাওয়া যায় এবং কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ ৩০ গ্রাম এবং ১ গ্রাম প্রটিন থাকে। কলাতে কোন ফ্যাট থাকে না। এছাড়াও কলা থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ পাওয়া যায় যা দৈনিক চাহিদার ১৬% যোগান দেয়। এতসব গুণের অধিকারী হওয়ার জন্য কলা কে মাল্টি ট্যালেন্টের খাদ্য বলা হয়।
পেজ সূচিপত্রঃ কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
কলার উপকারিতা
দামে কম কিন্তু মানে ভালো এমন একটি খাবার হচ্ছে কলা। এজন্য কলাকে "Super Fruit" বলা হয়। কলার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কলার উপকারিতা সম্পর্কে-
০১. দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে
আপনি যদি দুর্বল হয়ে থাকেন আপনার শরীরে যদি শক্তি বা এনার্জি না থাকে তাহলে প্রতিদিন নিয়ম করে কলা খান। দেখবেন আপনার শরীরের দুর্বলতা দূর হয়ে যাবে এবং আপনি শরীরে পুনরায় শক্তি বা এনার্জি ফিরে পাবেন।
০২. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
যারা উচ্চ রক্তচাপ সমস্যার মধ্যে আছেন তাদের জন্য বেস্ট একটি খাবার বলা যায় কলাকে। কারণ কলাতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে এবং লবণাক্ততার পরিমাণ কম থাকে যার কারণে এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই আপনি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কলা খেতে পারেন।
০৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
কলা খেলে ওজন বেড়ে যায় এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কলা খেলে ওজন বৃদ্ধি পায় না বরং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। কলাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কলা খেতে পারেন।
০৪. ত্বকের যত্নে কলার ব্যবহার
অনেক সময় আমাদেরকে মশা কামড়ায়। মশা কামড়ানোর ফলে আমাদের ওই জায়গাটা লাল হয়ে ওঠে ফুলে যায়। আমরা অতিরিক্ত চুলকানির কারণে সেই জায়গাটাতে ইনফেকশন হওয়া সম্ভাবনা থাকে বা দাগ হয়ে যায়। তখন আমরা বিভিন্ন ক্রিম বা অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করি। সেটা না করে যদি আমরা কলার খোসা দিয়ে সেই জায়গাটি ঘষতে থাকি তাহলে দেখবেন দাগ ভালো হয়ে গেছে।
০৫. মনোযোগ বৃদ্ধি করে
আজকালকার দিনে বেশিরভাগ মানুষেরই মন ভুলো হয়ে যায় এবং কোন কাজে মন বসে না। কলা খেলে এই সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যাবে। কারণ কলাতে থাকা প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আমাদের মনোযোগ শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
০৬. হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়
হৃদ যন্ত্র ভালো রাখার জন্য কলা অনেক উপকারী একটি খাদ্য। মাঝারি সাইজের কলা খেলে আমাদের শরীরে প্রায় ৪০০ গ্রাম পটাশিয়াম প্রবেশ করে যা হৃদ যন্ত্র ভালো রাখার জন্য যথেষ্ট।
০৭. হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে
কলাতে থাকা প্রচুর পরিমাণে আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন উৎপাদন বৃদ্ধি করে। তাই হিমোগ্লোবিন উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার জন্য নিয়মিত কলা খান উপকার পাবেন।
0৮. হজমে সহায়তা করে
একটি মাঝারি সাইজের কলাতে থাকে ৩ গ্রাম ফাইবার বা আাঁশ যা আমাদের পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং হজম করতেও সাহায্য করে।
কলার অপকারিতা
এতক্ষণ তো কলার অনেক উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলেন। এখন আসুন কলার অপকারিতা বা কিছু কিছু ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করা যাক-
০১. পেট ব্যথা হয়
কলাতে অতিরিক্ত শর্করা থাকার কারণে কলা খেলে অতিরিক্ত শর্করার উপস্থিতিতে পেটে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাজার থেকে কিনে আনা কলার বেশির ভাগই নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে পাকানো হয় যা খেলে পেট ব্যথা হতে পারে।
০২. শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়
শ্বাসকষ্ট জনিত রোগীদের কলা না খাওয়াই ভালো কারণ অতিরিক্ত কলা খেলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
০৩. এলার্জির সমস্যা
কলা খেলে অনেকের এলার্জি হয় তাই যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তারা কলা খাওয়া এড়িয়ে চলবেন।
০৪. দাঁতের ক্ষয় হয়
কলাতে থাকে শর্করা। এই শর্করা দাঁতের ক্ষয় সৃষ্টি করতে পারে।
০৫. ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
অতিরিক্ত সুগার থাকার কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তারা কলা খাবেন না।
কখন কলা খাওয়া উচিত
কলা খাওয়ার জন্য বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম মতামত আছে। তবে সাধারণত সকাল বেলা কলা খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তবে ভুলেও কখনো খালি পেটে কলা খাওয়া ঠিক নয়। কোনো খাবারের সাথে অথবা সকালে খাবার গ্রহণের পর ভরা পেটে কলা খেলে সারাদিন অনেক উপকার পাওয়া যায়।
খালি পেটে কলা খেলে কি হয়
কলার বিভিন্ন পুষ্টি গুনাগুনের উপর ভিত্তি করে কলাকে শরীরের জন্য বেস্ট খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কলা যখন তখনই খাওয়া যায়। তবে সাধারণত খালি পেটে কলা না খাওয়াই ভালো।
কারণ খালি পেটে কলা খেলে এতে থাকা পটাশিয়াম পেটের ভিতর এসিডিটির সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া খালি পেটে কলা খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম এর ভারসাম্য নষ্ট হয়। এসব দিক বিবেচনার ভিত্তিতে খালি পেটে কলা না খাওয়াই উত্তম।
প্রিয় পাঠক বৃন্দ এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ😍